Monday, March 21, 2016

কাব্যময়.......



ভোরবেলার আলোর ফুঁটফুঁটে ধারা বয়ে যাচ্ছিলো পথঘাটে।
কোচিং এ যাবার জন্য বাসা হতে ব্যাগ কাধে বের হলাম।
যতটুকু মনে পড়ে ১৯৯৬ সালের একটা দিন হবে।

স্যারের বাসা মোহন পুরের গলিতে।আমি গলিতে হেটেঁ যাচ্ছি কাছেই একটা খাম্বার পাশে মানুষ সৃষ্ট কৃত্রিম ডাষ্টবিন ছিলো।মধ্যবয়সী একজন নারী(কাগজ কুড়ানো)ডাষ্টবিনের ময়লার স্তুপের মধ্যে পলিথিনের একটা ব্যাগে কাঠের লাঠি দিয়ে গুতিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।
কাছাকাছি যেতেই আমার হাটাঁর গতি কেন জানি কমে গেল।

ক্লাসের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে।কি ভেবে মহিলাটির কাছে গিয়ে অজানা কৌতূহলে দাড়িয়ে গেলাম।মহিলাটি আমার দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষনে ব্যাগ খোলায় মন দিলো।তারপর জিবনের প্রথম হতবাক করা অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হলাম।দেখলাম,ব্যাগ হতে ছ্রোট ফুটঁফুটেঁ সদ্যজাত শিশু বেরিয়ে এলো।চোখ মুখ কতটা সজীব সতেজ এখনি যেন ডাকবে"মা তুমি কোথায়"মহিলাটি ও আমি হতবাক হয়ে দু'পা সরে এলাম।

এতক্ষনে দু চার জন করে করে একটা মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়ে গেলো।
আমি ছোট বলে আস্তে আস্তে জটলার পিছনে ধাক্কায় চলে গেলাম।
ক্লাসের সময় পেড়িয়ে গেছে।ছোট বয়সে আমারও চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেলো।এখানে কেন এই বাচ্চাটা।ওর মা বাবা কই?ওর কি ক্ষুদা পায়নি?

(হায়রে,মানুষ পারবিনা যখন লালন করতে,জন্মদিলি কেন?যখন জন্মদিলি বাচাঁর অধিকার দিলিনা কেন?

তাও না পারলে এতিম খানায় দিয়ে দিতি,তবুও তো বাচঁতো একটা প্রাণ একটা শিশুর জীবন)।
এই কথা গুলা জটলার মানুষরা বলাবলি করছিলো।

স্যার,বেত(জালিবেত) হাতে বসে আছেন।আমায় দেখে বললেন আসেন স্যার আসেন।যথা নিয়মে দু'হাতে চারটি বারি খেলাম।ব্যাথিত হইনি চুপচাপ মার খেয়ে বসে পরলাম।স্যার ও সবাই অবাক।কেন আজ কোন ও আহ্ করলাম না।স্যার কিছু একটা বুঝতে পেরে জিঙ্গেস করলো,কি হয়ছে তোমার?

অনেক্ষন পর বললাম।ঘটনা শুনে সবাই চুপ! স্যার দুঃখিত হল।
সবাই একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।কে,কোথায়,দেখতে কেমন?
আজ ক্লাসের পড়ার বিষয় যেন "সেই ফুটঁফুটেঁ শিশুটি"

ফিরার পথে সেই জটলাও দেখিনি,দেখিনি কাগজ কুড়ানো মহিলাটিকেও!
খাম্বাটা পাশ কাটিয়ে যেতেই শিউড়ে উঠলো আমার দেহ।তখন চোখে ভাসছে ঐ মুখ খানি আর অপলক চেয়ে থাকা ঐ দুটি চোখ।


বন্ধুরা,এটা বাস্তব ঘটনাই সাজিয়ে লিখেছি,শুধু মাত্র সচেতনতা ও জানানোর দায়বদ্ধতা থেকেই।

Popular Posts

Blog Archive